‘খালেদার বিচার হয়েছে, হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিচার কই’

‘খালেদার বিচার হয়েছে, হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিচার কই’

দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচার হলেও আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা মেরে দেয়ার ঘটনায় দায়ীদের বিচার কোন পর্যায়ে তা জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
‘খালেদার বিচার হয়েছে, হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিচার কই’শুক্রবার রাতে বেসরকারি টেলেভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরে আয়োজিত ‘টক শো’ অনুষ্ঠান জনতন্ত্র-গণতন্ত্রে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ফারুক ও মান্নান যথাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বললেও সেলিম তার বক্তব্যে বড় দুই দলের নেতিবাচক দিকটি তুলে ধরেন।

সিপিবি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ও তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বিএনপি তাদের নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করে প্রতিপক্ষের আমলে ঘটা দুর্নীতির বিচার করে।

সেলিমের দাবি, এই দুই দলকে দিয়ে যে কাজের কাজ কিছু হবে না, সেটি জনগণ সব বুঝতে পারে।

‘জনগণ এমন একটি পক্ষকে ক্ষমতায় আনতে চায় যারা প্রতিপক্ষ বিবেচনা না করে স্বাধীনভাবে দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে দুর্নীতির বিচার করবে।’

বিএনপির আমলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং হাওয়া ভবনের দৌরাত্ম তুলে ধরেন বাম নেতা। বলেন, ‘বিএনপি যতদিন ক্ষমতায় ছিল ততদিন কোন বিচার হয়নি। এটা একটি দায়মুক্তি, এটা কালচার হয়ে গেছে যা এখনো অব্যাহত আছে।’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ প্রায় ৩০০ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন।

সে সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা বনানীর হাওয়া ভবনেই এই হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল বলে আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সে সময় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারেও এই ভবনটি সমালোচনার মুখে পড়েছিল।

বর্তমান সরকারের আমলেও কিছু উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির প্রসঙ্গ টানেন সিপিবি নেতা। বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিচার হয়েছে বুঝলাম। কিন্তু এই আমলেই তো হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে।’

‘এই শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারির যে হোতা, তদন্ত কমিশন যার নাম লিপিবদ্ধ করেছে, অফিসিয়ালি ঘোষণা না দিলেও সবাই এটা জানে তার সম্পর্কে পত্রিকার খবরে দেখলাম। খবরে দেখলাম খুব সহজেই ওই ব্যক্তির মামলাটা কিন্তু খারিজ করে দেয়া হয়েছে।’

‘এখন মানুষও ভাবছে এসব ঘটনার সুরাহার জন্য ততদিন অপেক্ষা করতে হবে যতদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় না আসবে। ততদিন এসবের বিচার হবে না।’

রাজনীতিতে পলিটিক্স ঢুকে গেছে

কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মনে করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক আগে থেকেই ‘পলিটিক্স’ ঢুকে গেছে। রাজনীতিতে আবার কীভাবে পলিটিক্স ঢুকে-সেই প্রশ্নেরও ব্যাখা দেন তিনি।

‘সনাতন ভাবে রাজনীতিকে আমরা ‘নীতির রাজা’ হিসেবে ধরে থাকি। আর পলিটিক্স শব্দের অর্থ ‘কুট-চাল’। যেটা একটু ঘৃণ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক। কে কাকে ল্যাং মারবে বিষয়টি এরকম।’

রাজনীতিতে এ ধরনের পরিস্থিতি নতুন নয় বরং অনেকদিন ধরেই চলে আসছে বলে মন্তব্য করেন এই রাজনীতিবিদ। বলেন, ‘বর্তমানে যেটা হচ্ছে সেটা হলো একই রাজ্য, এই লুটপাট, পরস্পরের বিরুদ্ধে একই বিষোদগার। আর এগুলোর ভেতর দিয়েই মানুষের মধ্যে হতাশা। অনিশ্চয়তার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জনগণ, যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলছে।’

‘বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বড় দুই দলের নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে যে ধরণের নেতিবাচক মন্তব্য ছুড়ছেন, জনগণ উভয় পক্ষের বক্তব্যই সত্য বলে মনে করছে, যা ওই নেতারা বুঝতে পারছে না।’

সেলিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা যখন বিএনপির বিরুদ্ধে কথা কথা বলে তখন বিএনপির সব নেতারাই খারাপ। আবার বিএনপির নেতারা যখন কথা বলেন, তখন তার সিংহভাগটাই থাকে আওয়ামী লীগের সব নেতারা খারাপ।’

‘কেনো খারাপ তার তথ্যপ্রমাণও দেয় তারা। কিন্তু এটা তো তারা (উভয় পক্ষ) বুঝে না যে জনগণ মনে করে দুজনই সত্য কথা বলছে। দুই দলের সামগ্রিক কথাই যে সত্য এটা নেতারা বুঝে না।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment